শুরুর কথা
ফটোগ্রাফীর অন্যতম একটা সাব-ক্যাটাগরী হচ্ছে ট্রাভেল/ভ্রমণ ফটোগ্রাফী। সাধারণত ট্রাভেল ফটোগ্রাফী বলতে কোন একটি এলাকায়, যেখানে একজন ফটোগ্রাফার ঘুরতে যাচ্ছেন/গিয়েছেন, সেখানের দৃশ্য, মানুষ, সমাজ, পরিবেশ, ঐতিহ্য, ইতিহাস ইত্যাদির ছবিতোলা। Photographic Societo of America ভ্রমণ ছবির যেই সংজ্ঞা দিয়েছে তার বাংলা করলে দাড়ায়, ভ্রমণ ছবি হচ্ছে সেই ছবি যা সময় এবং স্থানের অনুভুতি প্রকাশ করে, চারিপাশের ছবি, এখানের মানুষ, ঐ স্থানের আপন পরিবেশে তার সংস্কৃতি প্রকাশ এবং যার কোন ভৌগলিক সীমা রেখা থাকে না।
একজন ফটোগ্রাফার যখন কোন স্থান ভ্রমণ করে, তখন তার মাথায় ঐ স্থানের সব থেকে সুন্দর দৃশ্য, মানুষের অনুভুতি এবং বাকি সব কিছু ক্যামেরা বন্দি করার নেশা থাকে। আর সেই নেশাকে সত্য রূপে প্রকাশ করতে হলে দরকার হয় তার কিছু প্রস্তুতি, আর আজকের টিপস গুলি সেই সব বিষয় মাথায় রেখেই করা।
আসেন এবার টিপস গুলি দেখি
১. সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠুন
স্বাভাবিক ভাবে ভোর বেলায় সূর্য ওঠার পর থেকে ১ ঘন্টা এবং সূর্য ডোবার ১ঘন্টা আগে থেকে সময়টাকে বলা হয় Golden hours (যদিও বিষয়টা আপনি পৃথিবীর কোথায় আছেন তার উপরে অনেক কিছু নির্ভর করে)। এই সময়ের মধ্যে ছবি তুললে স্বাভাবিক ভাবে আপনি সুন্দর ছবি পাবেন। এই সময়ে আলো না খুব কড়া থাকে, না খুব হালকা। তার উপরে বাতাস কম থাকায় ফুল ও প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি তোলাটাও সহজ হয়। এ ছাড়া ঠিক ঐ সময়টাতে সাধারণ মানুষ আস্তে আস্তে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে এবং সুনশান রাস্তা ঘাট আস্তে আস্তে পরিণত হয় লোকারণ্যে, তাই অসাধারণ কিছু ছবি তুলতে হলে এই সময়েই বের হওয়া উচিত। এছাড়া আরও একটা মজার বিষয় আছে। সেটা হল, টুরিষ্ট স্পট গুলিতে স্বাভাবিক ভাবে কোন স্থানের ছবি তুলতে গেলে সব থেকে বড় যেই সমস্যাটা হয়, তা হল মানুষ সুন্দর সুন্দর জায়গাগুলির সামনে দাড়িয়ে পোজ নিতে থাকে, যার কারণে মানুষ ছাড়া ঐ স্থানের সুন্দর একটা ছবি নেওয়া সমস্যা হয়ে দাড়ায়, কিন্তু এত সকালে সাধারণত টুরিষ্টরা ঘুমিয়ে থাকে, তাই এটাই মোক্ষম সময়।
২. কিছু রিসার্চ করুন
কোন স্থানে যাবার আগে ঐ স্থান সম্পর্কে একটু খোঁজ খবর নিয়ে যাওয়া ভাল। তাছাড়া এখন গুগল এবং ফ্লিকারের জন্য বিষয়টা অনেকটাই সহজ হয়ে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে কোথাও যাবার আগে ঐ স্থানের নাম দিয়ে সার্চ দিলে আপনি প্রচুর তথ্য এবং ছবি পাবেন যা আপনাকে অনেক বিষয়ই সহজ করে দিবে। আর ঐ স্থানে পৌছেও একটু খোঁজ খবর নিন, মুখ বন্ধ করে নিজে অনেক জানি ভাব নিয়ে ঘুরবেন না। অনেক সময় দেখা যায় মুখ বন্ধের কারণে সুন্দর একটা জায়গা বাদ পড়ে গেছে।
৩. নিজের জিনিষ পত্র সম্পর্কে জানুন
কোন স্থানে যাবার আগেই আপনি ঐখানে ফটোগ্রাফীর জন্য যা যা নিচ্ছেন, তা সম্পর্কে জানুন। এমনটা অনেকেই করেন যে একটা লেন্স নিয়ে জায়গায় হাজির হলেন, তারপর আর তা অপারেট করতে পারেন না। তাই বাড়ি থাকতে থাকতেই জিনিষ সম্পর্কে জানা উচিত, যাতে করে আপনি আপনার ভ্রমণের সম্পূর্ণ সময়টাকে কাজে লাগাতে পারেন।
৪. থাকার যায়গা
ভ্রমণের সময় থাকার জায়গা একটা বড় বিষয়। যেই স্থানে যাচ্ছেন, স্বাভাবিক ভাবে যদি আপনি ঐ স্থানের সেন্টারে বা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে থাকতে পারেন, তাহলে ভাল হয়। এছাড়া যদি সম্ভব হয়, তাহলে ভাল ভিউ আছে এমন একটা হোটেলে থাকতে পারেন। আর কোন স্থানে যদি খোলা আকাশের নিচে তাবুঁ টানিয়ে রাত থাকার মত অবস্থা থাকে, তাহলেতো কথাই নেই।
৫. Hello বলা শিখুন
কোন স্থানে গেলে ঐ স্থানে মানুষ একজন আর একজনকে কি ভাবে সম্ভাষণ জানায় তা শিখে নেওয়া একটা গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। কোন মানুষ তার নিজের ভাষায় অন্য ভাষা-ভাষীর একজনকে সম্ভাষণ দিতে দেখলে তার প্রতি একটু হলেও খুশি হয়। একটু চিন্তা করুন, কোন আমেরিকান ফটোগ্রাফার যদি আপনাকে বাংলায় “শুভ সকাল” বলে, আপনার কেমন লাগবে।
৬. দেখুন, পড়ুন ও শুনুন
যদিও এই বিষয়টা রিসার্চের কথা বলার সময় বলা হয়েছে, তবুও সেকশনটা একটু আলাদা। কোন স্থানে যাবার আগে ঐ স্থানের ছবি যেমন দেখা উচিত, তেমন ঐ স্থানের সম্পর্কে পড়াও অনেক গুরুত্ব পুর্ণ। আর মানুষ কি বলে সেটা শোনাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে যদি বাংলাদেশের কোন স্থানে ঘুরতে যান, একটাই টিপস, ট্রাভেল গাইডদের ভয় ধরানো কথাবার্তায় একদমই কান দিবেন না। এরা ভয় দেখিয়ে গাইড হতে খুব বেশী পছন্দ করে।
৭. জায়গাটাকে উপলব্ধি করুন
পৃথিবীর প্রত্যেকটা জায়গার একটা স্বকীয়তা আছে। সেই স্বকীয়তাটাকে উপলব্ধি করতে পারাটাই মূল বিষয়। আপনি আপনার নিজের এলাকায় যেমন নিরাপদ বোধ করেন, তেমনটা উপলব্ধি করাটা একটা গুরুত্ব পূর্ণ বিষয়। আবার ধরেন আপনি কোন ধর্মিয় পবিত্র জায়গায় গিয়েছেন, আর সেখানে এমন একটা ড্রেস পরলেন যা ঐ স্থানের সাথে মিলে না। তখন আপনি যেমন বিব্রত বোধ করবেন আশেপাশের মানুষও তেমন বিব্রত বোধ করবে। বিশেষ করে দক্ষিণ এশিয়ার জায়গা গুলিতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই জিনিষটা বিশেষ গুরুত্ব পূর্ণ।
৮. একজন বন্ধু জোগাড় করুন
খুব স্বাভাবিক ভাবে কোথাও গেলে আপনি যদি একটু বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে সহজেই মানুষের সাথে মিশে যেতে পারবেন। আর তাতে করে একজন বন্ধু, যে আপনাকে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে, জোগাড় করা খুব একটা সমস্যার বিষয় না। হোটেল বয় বা ম্যানেজার, আশেপাশের কোন দোকানের লোকজনের সাথে একটু হাসি মুখে কথা বললেই স্বাভাবিক ভাবে তারাও আপনার সাথে স্বাভাবিক আচারণ করবে।
৯. অল্প জিনিষ নিয়ে ভ্রমণ করুন
ভ্রমণের সময় সাথে সব সময় অল্প জিনিষ পত্র নেওয়াটাই ভাল। হয়ত আপনি প্রচুর জিনিষ নিয়েই যাবেন, কিন্তু হোটেলে তা রেখে তারপর হালকা জিনিষ পত্র নিয়ে ছবি তুলতে বের হওয়া উচিত। আপনার ফটোগ্রাফীর ইকুয়িপমেন্টের ভার যদি ১০ কেজি হয়ে যায়, তাহলে আপনার জন্য বেশি সময় ছবি তুলে বেড়ান সমস্যা হয়ে দাড়াঁবে। তাই শুধুমাত্র দরকারী জিনিষ নিয়েই বের হওয়া উচিত।
১০. একটা নতুন কিছু দেখান
আমি জানি কক্সবাজারে সমুদ্র আছে, এবং খাগড়াছড়িতে পাহাড় আছে। কিন্তু আপনি যদি আমাকে এমন কিছু দেখাতে পারেন যা আমি জানি না যে ঐখানে আছে, বা এমন কোন একটা ভিউ দেখাতে পারেন যা ঐ স্থানকে আমার কাছে নতুন করে উপস্থাপন করবে, তাহলেই সেটা হবে আপনার সার্থকতা। তা না হলে যেই ছবি তোলা হয়ে গেছে, তা আবার তুলে খুব একটা দর্শকের মন জয় করা সম্ভব না। তাই বলে গতানুগতিক ছবি কি তুলবেনই না? অবশ্যই তুলবেন, কারণ অন্য একজন একটা জিনিষ দেখিয়ে ফেলেছে মানে আর দেখান যাবে না তা না। কিন্তু নতুন কিছু করার বা দেখানোর বিষয়টা মাথায় রাখতেই হবে।
১১. এক সাথে সব দেখতে যাবেন না
আপনার হয়ত সময় সল্পতা আছে, আর তাই এক স্থান থেকে দৌড়ে অন্য স্থানে গিয়ে দ্রুত সব কিছু না তুলে মাত্র একটি জায়গার সুন্দর কিছু কাজ করুন। তাতেই বরং আপনার ছবি সুন্দর হবে।
১২. আস্তে আস্তে ভ্রমণ করুন
যদি সময় আপনার অনুকূলে থাকে, তাহলে আস্তে আস্তে ভ্রমণ সব থেকে বুদ্ধিমানের কাজ। কোন স্থানে যাবার জন্য ট্রেন বা বাসে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের, বিমানে যাওয়ার কারণে হয়ত রাস্তার পাশের অসাধারণ একটা জায়গা মিস করবেন। আবার কোন স্থানে গিয়ে আশে পাশে হেটে হেটে ঘুরে দেখাটা বুদ্ধিমানের কাজ। তাতে করে প্রতিটি ইঞ্চি জায়গা দেখার একটা সুযোগ হবে। এতে করে আপনি অসাধারণ কিছু পেয়ে যেতে পারেন। যেমন কক্সবাজার থেকে হিমছড়ি বীচে যাবার জন্য আমার হিসাবে চান্দের গাড়ী থেকে ব্যাটারী চালিত গাড়িই বেশী পছন্দের।
১৩. মাঝে মধ্যে ক্যামেরাটাকে নামিয়ে রাখুন
সব সময় ক্যামেরা চোখে লাগিয়ে রাখলেই হবে না। তবে প্রস্তুত থাকতে হবে। মাঝে মধ্যে ক্যামেরা রেখে চারিদিকে তাকান ভাল, তাতে করে আপনি আশেপাশে খুব ভাল করে দেখতে পারবেন। হয়ত কোন ভাল একটা শটের জন্য মাথায় কিছুটা কাজও করতে পারবেন, যা লেন্সের মধ্যে থেকে দেখলে কখনই পেতেন না।
১৪. সব কিছু স্বাভাবিক রাখুন
Henri Cartier Bresson, একজন গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ফটোগ্রাফার, যিনি কখনও তার ছবি তোলায় ফ্লাসের ব্যবহর করেন নি। তার ভাষ্য মতে, একটা কনসার্টে ফ্লাস নিয়ে যাওয়া কিছুটা একটা পিস্তল হাতে নিয়ে যাওয়ার মত। সব সময় উচিত ন্যাচারাল লাইটের সুবিধাটা নেওয়া। তাই বলে কখনই ফ্লাস ব্যবহার করবেন না এমনটা নয়। তবে যথা সম্ভব এইসব এড়িয়ে চলা ভাল।
১৫. উচুঁতে উঠুন
একটু উপরের দিকে যদি উঠতে পারেন, যেমন যেই স্থান থেকে ঐ জায়গার সম্পূর্ণ একটা ভিউ পাওয়া যাবে, সেটা হবে আপনার জন্য একটা প্লাস পয়েন্ট।
১৬. অজুহাত দিবেন না
যদি কখনও কাউকে বলা হয় যে ছবি ভাল হয়নি কেন, তখন স্বাভাবিক ভাবে যা উত্তর আসে তা হল, “আমারতো ভাই দামী ক্যামেরা না”, “যদি আমারে কেউ ঘোরাঘুরির জন্য টাকা দিতে, তাইলে হয়ত আর একটু সময় নিয়ে ভাল কিছু করতে পারতাম”, “আমার যদি আর একটু সময় থাকত” ইত্যাদি ইত্যাদি। সরল কথায় এই গুলা হল অজুহাত। আর হুমায়ুন আহম্মেদের ভাষায় বাঙ্গালীর তিন হাত, ডান হাত, বাম হাত এবং অজুহাত। মূল বিষয় হল আপনি যদি পারেন, এমনিই পারেন, না পারলে কোন ভাবেই পারেন না। সুতরাং, আপনার যা নেই তার জন্য কান্নাকাটি না করে, আপনার যা আছে তাকেই আয়ত্ব করুন। যেমন আমার নিজের ক্যামেরা নিকন ডি৩১০০। অনেকেই বলে যে এইটা দিয়ে আর কিইবা তুলবা। কিন্তু ফ্লিকারে নিকন ডি৩১০০ এর যেইসব ছবি আছে, তা দেখে অনেক ৫ডি মার্ক২ এর মালিকও মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। আপারন টাকা দামী কিছু কেনার আগে শেখার জন্য ব্যয় করা উচিৎ। আর ট্রাভেলের ক্ষেত্রে ঘোরাঘুরির জন্য কম টাকা খরচ করেই সুন্দর ভাবে ঘোরা যায়। এবং ভাল কিছু করা যায় এটা মাথায় রাখা উচিৎ। যেমন ৪০০ টাকা দিয়ে সিলেটে বাসে করে না গিয়ে ২০০ টাকা দিয়ে ট্রেনে থার্ড ক্লাসে বসে যাওয়া, এবং ভাল একটা হোটেলে প্রতিদিন ১,০০০ টাকা না দিয়ে ২৫০ টাকায় কোন হোটেলের চিপা রুমে থাকা ভাল। কিন্তু অন্য কিছুর জন্য খরচ করাটাই মনে হয় ভাল হবে।
১৭. একজন গুরু খুজেঁ বের করুন
ছবি তোলাটা শুধুমাত্র ক্লিক করলাম আর ছবি উঠল এমন কিছু না এটা মনে হয় আর বলার দরকার নাই। তাই শেখার জন্য একজন গুরু ধরুন। যদি পারেন, তাহলে একজন প্রফেশনাল ফটোগ্রাফারের এসিস্টেন্ট হিসাবে কাজ করুন। তাহলে অনেক কিছুই শিখে ফেলতে পারবেন, যা হয়ত ফটোগ্রাফীর ক্লাস রুমে বছরের পর বছর কাটিয়ে দিলেও শিখতে পারতেন না। আর ট্রাভেল ফটোগ্রাফীর জন্য যেই সব ট্রাভেল ফটোগ্রাফার আছেন, তাদের কাছ থেকে টিপস নেওয়াটাতো অনেক গুরুত্ব পূর্ণ।
১৮. অসাধারণ জায়গা পৃথিবীর সব খানেই আছে
অনেকেই মনে করেন যে অসাধারণ জায়গা মনে হয় শুধু অমুক জায়গাতেই আছে। কিন্তু আপনার বাড়ির পাশেই হয়ত সুন্দর সুন্দর জায়গা আছে, যা আগে কেউ খুজেঁ পায়নি। তাই আশেপাশে ঘুরুন, সুন্দর কিছু পাবেন এতে সন্দেহ নাই। হয়ত তখন আপনাকেই সবাই ফলো করবে।
১৯. যত যাই হোক, ঘোরাঘুরি থামাবেন না
একজন ভাল ট্রাভেল ফটোগ্রাফার হতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপনার পোর্টফোলিওকে জীবিত রাখতে হবে। সেই ১৯৯৯ সালে একবার কক্সবাজারে গিয়েছেলেন আর সেই আগামি ২০২৭ সালে একবার সেন্ট মার্টিন যাবেন আর সিরাম কিছু ছবি তুলবেন, এই ধারণা রাখা একটা বোকামী। যত ঘুরবেন, তত সুন্দর জিনিষ পাবেন, আর ততই আপনার ফটোগ্রাফীর আগ্রহ বাড়বে। হয়ত বাড়ির পাশের কোন এলাকাই ভ্রমণ করলেন। অথবা সকালের বাজারের দৃশ্যের জন্য পাশের বাজারেই গেলেন। অথবা কোন একটা উৎসবের ছবি তুললেন। যাই করেন, ঘোরাঘুরি থামানো যাবে না।
২০. মানুষের মত আচারণ করেন
গতকাল (আগষ্ট ৩, ২০১৩) একটা ফটোগ্রাফী গ্রুপে দেখলাম একটা ছবি নিয়ে বিশাল ক্যাচাল। যেই ফটোগ্রাফার নিজে ছবিটি তুলেছেন, তিনি ছবি পোষ্ট করে অন্যদেরকে আসলে বুঝাতে চেয়েছিলেন যে উপজাতীরা চিড়িয়াখানার কোন জন্তু জানোয়ার না। তারা আমাদের মত মানুষ। আমরা নিজেদের যেই অবস্থার ছবি তুলতে লজ্জাবোধ করব, তাদেরও ঠিক সেই অবস্থাগুলির ছবি তুলতে লজ্জা লাগবে। যদিও অনেকেই ঐ ফটোগ্রাফারকে তুলাধুনা করে ফেলেছেন যে তাহলে আপনি কেন তুলেছেন, এবং তা শেয়ার করেছেন। হ্যাঁ মানি তিনি ভূল করেছেন, তবে তিনি কাজটি করেছিলেন তার ফটোগ্রাফী শুরুর দিকে, এবং এখন তিনি উপলব্ধী করেছেন যে কাজটি ভুল হয়েছে। তাই তিনি সবাইকে এমন ছবি তুলতে বারণ করছেন। যাই হোক, বিষয় হল, যারা আপনার ক্যামেরা বন্ধী না হতে চায়, তাদের ছবি তুলবেন না। যদি কাউকে আপনি ছবি তোলার সময় কথা দিয়ে থাকেন যে আপনি তাদেরকে তাদের ছবি পাঠাবেন, তাহলে অবশ্যই তা করবেন। আর এটা করলে পরবর্তিতে ঐখানে যেই ফটোগ্রাফার যাবে, সে তাদের কাছ থেকে ভাল কিছু পাবে। আপনি হয়ত এই লাইনটা পড়েই মাথায় ফন্দি আটঁছেন যে বিভিন্ন জায়গায় যেয়ে এমন ব্যবহার করবেন, যে অন্য ফটোগ্রাফার ঐখানে গেলে প্যাদানি খাবে। এটা চিন্তা করলে ভূল করছেন। কারণ আপনার আগেই যদি এমন কাজ কেউ করে আসে, পরবর্তিতে প্যাদানি কিন্তু আপনিই খাবেন। তাই, মানুষ হয়ে জন্মেছেন, মানুষের মত ব্যবহার করুন।
শেষ কথা
একজন ফটোগ্রাফার আর যাই হোক না কেন মানুষ। তার নিজের চিন্তাশক্তি আছে, আছে সৃজনশীলতা। এখানে যেই টিপসগুলি দেওয়া আছে, তা বিভিন্ন নামীদামী ফটোগ্রাফারদের বলা কথার উপরে ভিত্তি করেই দেওয়া। তার মানে এই নয় যে এইগুলিই মানতে হবে, অন্য কিছু মানতে পারবেন না, বা আপনার নিজের মত করে চিন্তা করতে পারবেন না। নিজের সৃজনশীলতাকে অবশ্যই প্রধান্য দিবেন। আর, একজন ফটোগ্রাফার যেহেতু একজন মানুষ, ঘুরতে বের হলে সব সময়ই যে তার ছবি তুলতে হবে এমন কথা নাই। মাঝে মধ্যে ক্যামেরা রেখে একটু এদিক ওদিক দেখা কখনই খারাপ না। না হয় একটা ছবিই মিস হল, কিন্তু মানসিক প্রশান্তিরও দরকার আছে।
যদি ভাল লাগে, লেখাটা অন্যদের সাথে শেয়ার করার অনুরোধ থাকল। কষ্ট করে পড়ার জন্য ধন্যবাদ।