প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি অতি অতি অনিয়মিত লেখার জন্য। ইচ্ছা ছিল প্রতি সপ্তাহে একটি করে লেখার। কিন্তু আবিস্কার করলাম গত কয়েক মাসে আমি কিছু লিখি নি। তাই আলসেমী ঝেরে আবার লিখতে বসে গেলাম।
গত লেখাটার পরে অনেকেই আমার মেসেজ বক্সে বিভিন্ন মেসেজ দিয়েছেন। কেউ ধন্যবাদ জানিয়ে, কেউ বা লেখার কোন অংশ না বুঝতে পেরে, আবার কেউ বা তাদের কোন সমস্যার কথা জানিয়ে লিখেছেন। এর মধ্যে আমার এক ছাত্রী, রাশমিন ইসলামের মেসেজ টি তার অনুমতি সাপেক্ষে প্রকাশ করছি,
“ স্যার, আপনার লেখাটা পড়ে অনেক মজা পেলাম। ক্যামেরার ভেতরের অনেক কিছু নতুন করে জানতে পারলাম। সেই সাথে একটু হতাশ ও হলাম। কারণ আমার ত ডিএসএলআর ক্যামেরা নেই। আমি ত ছবি তুলি মোবাইল ফোন অথবা পয়েন্ট এন্ড শুট ক্যামেরা দিয়ে। তাহলে আমি কিভাবে অ্যাপারচার ও শাটার স্পীড কন্ট্রোল করব? খুব তাড়াতাড়ি আব্বু আমাকে ডিএসএলআর কিনে দেবে এমন সম্ভাবনাও নাই। তাহলে এমন কি কোন উপায় আছে , যাতে আমি আমার এখনকার ক্যামেরা দিয়েই অ্যাপারচার আর শাটার স্পীড কন্ট্রোল করতে পারি?”
রাশমিনের এই প্রশ্ন আসলে শুধু ওর না, আমার ধারনা প্রায় সব পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ইউজারদের মনের প্রশ্ন। আজকের লেখায় এই প্রশ্নের জবাবই আমরা খোঁজার চেষ্টা করব।
প্রথমত এটা বলে রাখি যে সবচেয় ভাল হয় ডিএসএলআর কিনে ফেলতে পারলে। কারণ একটা পয়েন্ট এন্ড শুট কে “ট্রিক” করে আমরা হয়ত আগের চেয়ে ভাল কোয়ালিটির ছবি পাব, বা কিছু মাত্রায় অ্যাপারচার ও শাটার স্পীড কন্ট্রোল করতে পারব। কিন্তু পুরোপুরী ম্যানুয়াল কন্ট্রোল করা যাবে না। আজকাল অবশ্য অনেক অ্যাডভান্সড পয়েন্ট এন্ড শুট বের হয়েছে, যেগুলো তে পুরোই ম্যানুয়াল কন্ট্রোল করা যায়, তবে তার দাম ঠিক নাগালের মধ্যে নেই।
যদি এই মুহুর্তে ডিএসএলআর বা অ্যাডভান্সড পয়েন্ট এন্ড শুট কেনার মত বাজেট না থাকে (যা খুবই স্বাভাবিক) তাহলে কি আমরা ছবি তুলব না? অবশ্যই তুলব, শুধু আমাদের জানতে হবে কিভাবে আমাদের ক্যামেরা কে ট্রিক করে তার কাছ থেকে কাজ আদায় করতে হবে। আমাদের কাছে যে সব সাধারন ডিজিটাল ক্যামেরা বা মোবাইল ক্যামেরা থাকে সেগুলো প্রায় পুরো টাই অটো মুডে কাজ করে থাকে। এরা সামনের আলোর উপরে নির্ভর করে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিয়ে একটা সেটিং অটোমেটিক্যালি সিলেক্ট করে নেয়। একদম সাধারন একটা ডিজিটাল ক্যামেরা তেও যে সব প্রিসেট মুড থাকে সেগুলো হল পোর্ট্রেট, ল্যান্ডস্কেপ, ম্যাক্রো, স্পোর্টস, নাইট ইত্যাদি। এখন চলুন আমরা আমাদের ক্যামেরা কে ট্রিক করি। আজকের এই লেখায় যে ছবি গুলো ব্যাবহার করছি সেগুলো সবই মোবাইল ফোন অথবা সাধারন ডিজিটাল ক্যামেরায় তোলা।
- যদি আমরা শ্যালো ডেপথ অফ ফীল্ড চাই,(অর্থাৎ সাবজেক্টের সামনে পিছনে ঘোলা চাই) তাহলে আমরা পোর্ট্রেট মুড সিলেক্ট করলে ক্যামেরা সবসময় ই ওয়াইড অ্যাপারচার সিলেক্ট করবে। এরপরে আপনি সাবজেক্ট কে ব্যাকগ্রাউন্ডের বেশ কিছুটা সামনে রেখে আপনার ক্যামেরার হায়েস্ট পসিবল জুম করে নিয়ে (অথবা ক্যামেরা হাতে সাবজেক্টের খুব কাছে গেলে) ছবিটা তুলতে ব্যাকগ্রাউন্ড এ আগের চেয়ে অনেক বেশী বোখে পাবেন। (ঘোলা ঘোলা হবে 😛 ) যেমন নিচের ছবি তিনটায় আমরা বড়ো অ্যাপারচার রাখায় ব্যাকগ্রাউন্ড ঘোলা হয়ে গেছে।
- যদি আমরা ওয়াইড ডেপথ অফ ফীল্ড চাই, (অর্থাৎ ফীল্ডের সবকিছুই চকচকা পরিস্কার দেখা যাবে) তাহলে আমরা সিলেক্ট করব ল্যান্ডস্কেপ মুড। তাতে আমাদের ক্যামেরা সবসময় ই ছোট অ্যাপারচার সিলেক্ট করবে। যেমন নিচের ছবি দুটোয় প্রায় সবকিছুই পরিস্কার দেখা যাচ্ছে।
- যদি আমরা আমরা কোন মোশন কে সম্পূর্ন ফ্রিজ করে ফেলতে চাই, তাহলে আমরা স্পোর্টস মুড সিলেক্ট করব। তাতে ক্যামেরা সবসময় খুব ফাস্ট শাটার স্পীড সিলেক্ট করবে। যেমন নিচের ছবিতে শাটার স্পীড বেশী থাকায় মানুষ গুলো ফ্রীজ হয়ে গেছে। তারা যে হাটছিল সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
- যদি আমরা ছবিতে মোশন দেখাতে চাই, (যেমন ফ্লোইং ওয়াটার বা প্যানিং) তাহলে আমাদের কে স্লো শাটার সিলেক্ট করতে হবে। এইটা পয়েন্ট এন্ড শুটে একটু কঠিন, কারণ সাধারনত প্রিসেট মুডগুলো তে এমন সেটিং পাওয়া কঠিন। তবে নাইট মুড সিলেক্ট করলে ক্যামেরা মনে করে যে সামনে আলো অনেক কম, তাই সে শাটার স্পীড স্লো করে ফেলে। তাই এই মুডে মোশন তোলা সম্ভব। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ফ্ল্যাশ টা ম্যানুয়ালী ডিজ্যাবল করে নিতে হবে অথবা ডিজ্যাবল না করা গেলে কিছু দিয়ে ঢেকে নিতে হবে ।
এই ছোট ট্রিক গুলো করলে অবশ্যই কিছু মাত্রায় আপনি আপনার শাটার স্পীড ও অ্যাপারচার কন্ট্রোল করতে পারবেন। কিন্তু নির্দিষ্ট কোন সেটিং এই ভাবে পাওয়া সম্ভব নয়। আশা করি টিপস গুলো আপনাদের কাজে লাগবে। হ্যাপী ক্লিকিং।
স্যার আমি অভিভূত ও একই সাথে সম্মানিত বোধ করছি আপনার এই অসাধারণ, চমৎকার লেখনীর একটা অংশে আমার মতো একজন ক্ষুদ্র মানুষের কথাটি স্মরণ করার জন্য…।
এত চমৎকার ভাবে ও সংক্ষেপে এতো প্রয়োজনীয় তথ্য জানানোর জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আশা করি ভবিষ্যতে আমাদের জন্য এভাবেই লিখা উপহার দিবেন… 😀
তোমাকেও ধন্যবাদ রাশমিন। এই ব্যাপারটা মাথায় ঢোকানোর জন্য। 😀
খুব ভাল টিপস , পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ইউজারদের অনেক বেশী কাজে দেবে । ডিএসএলআর এর সাথে সাথে একটা পয়েন্ট অ্যান্ড শুট ক্যামেরা সব সময় ই আমার ব্যাগে রাখি । ধন্যবাদ ।
Sir. Ami DSLR Canon EOS 1100D Nite Chai. Ei Camera ti Photography r Jonno Kemon Hobe, Macro Lens 50mm ar 55-250mm ei Camera te Support Korbe, Asha Kori Janaben. Dhonnobad
জ্বি এই লেন্স গুলো সাপোর্ট করবে, তবে ৫০ মিমি কিন্তু ম্যাক্রো লেন্স না
ভাই মোবাইল এর ক্যামেরা দিয়ে ও কি এইগুলা করা সম্ভব??
হ্যা সম্ভব। এই পোস্টে যে ছবিগুলো দিয়েছি তার বেশিরভাগই মোবাইল দিয়ে তোলা। 🙂 মাত্র দুইটা নর্মাল ডিজিটাল ক্যামেরা দিয়ে তোলা।