মোবাইল ফটোগ্রাফি, স্মার্টফোন ফটোগ্রাফি, আইফোনোগ্রাফি ইত্যাদি নামে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি তোলার বিষয়টি জনপ্রিয় হচ্ছে। গত এক বছরে বাজারে এসেছে এমন প্রায় সব স্মার্টফোনেই বেশ ভালো মানের ক্যামেরা যুক্ত করা রয়েছে। মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে ভাগাভাগি করার জন্য বেশ কিছু অনলাইন কমিউনিটিও রয়েছে। পাশাপাশি ফেসবুক, গুগল প্লাস, ফ্লিকার, পিকাসাতেও বহু দল রয়েছে। মোবাইল ফোনে ভালো ছবির কিছু টিপস থাকছে এবার।
ক্যামেরা সফটওয়্যার সম্পর্কে জানা ভালো
মানের ছবি তোলার জন্য ক্যামেরার ওপর নিয়ন্ত্রণ থাকা প্রয়োজন। মোবাইল ক্যামেরাগুলোতে এই কাজ করা হয় নির্দিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে। ক্যামেরা ও ভিডিও মোড পরিবর্তন, ফ্ল্যাশ লাইট চালু বা বন্ধ করার মতো কাজগুলো করার পাশাপাশি সাম্প্রতিক সময়ের ক্যামেরা অ্যাপগুলোতে আরও বিভিন্ন ধরনের সুবিধা থাকে। যেমন বিভিন্ন মোড অনুযায়ী ছবি তোলা, প্যানারোমা ও এইচডিআর ছবি তোলা। অ্যান্ড্রয়েডের নতুন সংস্করণে ফটো স্ফেয়ার নামে বিশেষ ধরনের ৩৬০ ডিগ্রি প্যানারোমা ছবি তোলার সুবিধা দিয়ে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ফোনে থাকা ডিফল্ট) অ্যাপেই এই সুবিধাগুলো ব্যবহার করা যায়।
কম্পোজিশনের সাধারণ নিয়ম
সুন্দর কম্পোজিশনে তোলা সব ছবিই দেখতে ভালো লাগে, তা সেটি যে ধরনের ক্যামেরাই ব্যবহার করা হোক। ‘রুল অব থার্ড’ কম্পোজিশনের বেশ প্রচলিত নিয়ম। ইন্টারনেটে এই বিষয়ের ওপর অনেক টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়, সেখান থেকেও শেখা যেতে পারে এই নিয়ম। এ ছাড়া কম্পোজিশনের আরও অনেক নিয়ম রয়েছে। সব সময় যে নিয়ম মেনেই ছবি তুলতে হবে এমন নয়, তবে নিয়ম ভেঙে নতুন কিছু তৈরি করার জন্যও নিয়মটি জানা প্রয়োজন।
ছবিতে আলোর ব্যবহার
একটি ছবিকে আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য আলোর সঠিক নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত জরুরি। সঠিক মাত্রার আলোতে ছবির বিষয়বস্তু অর্থবহ এবং আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা যায়। ঘরের ভেতর সাধারণ ফ্ল্যাশ লাইটে অথবা দুপুরবেলা ঘরের বাইরে তোলা ছবিগুলোতে অধিক মাত্রায় আলো থাকে। কিছুটা অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় তোলা ছবিগুলোতে বিষয়বস্তু সঠিকভাবে ফুটিয়ে তোলা যায়।
মোবাইল ফোনগুলোতে সাধারণত একাধিক লেন্স ব্যবহারের সুযোগ থাকে না। ফলে বিভিন্ন ডেপথ অব ফিল্ড বা ফোকাস পরিবর্তনের সুযোগও নেই। এ কারণেও মোবাইল ছবি তোলার ক্ষেত্রে সঠিক মাত্রার আলো থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষ মুহূর্তগুলো ধরে রাখা
হয়তো আপনি এমন একটি সুন্দর জায়গায় ছবি তুলছেন, যেখানে সঠিক মাত্রায় আলো রয়েছে এবং অন্য সবকিছুই ছবি তোলার উপযোগী। ছবি তোলার আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো থাকার পাশাপাশি ছবির বিষয়বস্তুও আকর্ষণীয় হওয়া প্রয়োজন। আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া বিশেষ মুহূর্তের ছবি তোলার জন্য সতর্ক থাকুন। ছবিতে মানুষের কথা বলা, খাওয়া, চলাচল ইত্যাদি কার্যক্রম থাকলে সেটি ছবিকে আকর্ষণীয় করে তুলতে সহায়তা করে।
ছবিটি যদি বিশেষ কোনো মুহূর্তকে প্রকাশ না করে, তাহলে হয়তো আপনি জড় জীবনের ছবি তুলছেন। এ ধরনের ছবি তোলা তুলনামূলক সহজ এবং এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ফেসবুক, টুইটার বা ইনস্টাগ্রামে বেশিসংখ্যক খাবার ও কফি কাপের ছবি দেওয়া হয়।
ছবি তোলা চালিয়ে যান
যেকোনো বিষয়ে দক্ষতা অর্জনের জন্য সেটি নিয়মিত চর্চা করা প্রয়োজন। ছবি তোলার ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই রকম সত্য। কেবল হঠাৎ হঠাৎ বিশেষ অনুষ্ঠানের ছবি তুললে ভালো ছবি তোলার সম্ভাবনা কম থাকে। চেষ্টা করুন প্রতিদিন ছবি তুলতে। কোনো দিন যদি ছবি তোলার ইচ্ছা না করে, সেই দিনও অন্তত কয়েকটি ছবি তুলুন। সেটি কোনো সাধারণ খাবারের ছবিও হতে পারে। অন্য কোনো অ্যাঙ্গেল বা মাইক্রো, মিনিয়েচার বা ক্যামেরার অন্য কোনো মোডে ছবিটি তুলার চেষ্টা করুন। আর ছবিটি কেন অন্য সাধারণ ছবি থেকে আলাদা, সেটি বের করার চেষ্টা করুন। আর আপনি ছবিটি শেয়ার করার পর বন্ধুরা যদি বলে, সে আগে কখনো এই সাধারণ বিষয়টি এভাবে দেখেনি, তবে মনে করবেন, আপনি সঠিক পথে এগোচ্ছেন।
টেকরাডার অবলম্বনে নাসির খান
First Published on Prothom Alo, December 20, 2013 http://www.prothom-alo.com/technology/article/103492/