আমাদের ছবির ক্যাটাগরি ক্যাচাল ও ছবির বিষয়ভিত্তিক কম্পোজিশন – ১ম পর্ব – ফায়েক তাসনিম খান

আমরা সবাই ফটোগ্রাফার। সবাই মনের আনন্দে মনের খোড়াক যোগাতে ছবি তুলে থাকি। আমরা যা দেখি, যা ভালো লাগে আমাদের চোখ সর্বপ্রথম ছবিটি তুলে থাকে। আমরা দেখি, আমাদের মন দিয়ে অনুভব করি। তখন আসে আমাদের ব্রেন তথা মগজ কয় “এইডাই তূলতে হইব, এইডা রাইখা দিতে হইব। তবে যার, যেটারই বা যা আমরা ছবি তুলে থাকি হাজার নিয়ম, টেকনিক, সময় দিয়ে সেই ছবিটার মত আরও ছবি খুজে দেখতে ছবিটার ক্যাটাগরি জানা প্রয়োজন। যেমন: কেউ আমরা একটা জুশ আখাম্বা বাড়ি দেখে ভালো লাগায় তার ছবি তুলেই ফেলতে পারি। এখন কথা হইল ছবি আপ্নে তূলতে চাইছেন তুলেই ফেলছেন। যদি আপনি আপনার তোলা নিয়ে খুশি থাকেন তবে আর কোন কথা হইতে পারে না। কিন্তু যদি আপনের মনে হয় যা তুল্লাম আর কি হতে পারত অথবা এইরকম আখাম্বা বাড়ির ছবি আপ্নের ভালো লাগে বলে আরও আখাম্বা জিনিশ পত্র দেখতে চান তবে আপনার জানা দরকার আপনি কি ধরনের ছবি তুলছেন, কোন ক্যাটাগরির ছবি হইছে আপ্নেরটা। এখন অসংখ্য ক্যাটাগরি আছে ফটোর। একেক ধরনের লোকের ছবি, তার দেখার স্টাইল, সাবজেক্ট উপর অনেক ভাগে ভাগ করা যায়।  তাই আমি আমার মত বেছে আনকমন কয়টি নিয়ে আলোচনা করতে যাচ্ছি। আনকমন গুলা তার কারন হল আমরা ল্যান্ডস্কেপ, পোট্রেট, ফ্যাশন, কমারশিয়াল যেমন বিবাহগ্রাফি বা মুদেল্গ্রাফির সাথে পরিচিত। তবে কমন বলাতে এটা মনে করার কোন কারন নেই যে, এগুলো সোজা বা কম গুরুত্বপূর্ণ এই ক্যাটাগরিগুলোতেও অনেক কাজ করা যায় যা আপনের ইনভেনসনের ছাপ রাখবে। বাকি গুলোর কথা আলোচনা করতে চাচ্ছি কারন এই ক্যাটাগরির কাজ একটু কম চোখে পরে এবং কঠিনও বটে।

১। Aerial Photography‎ :  ক্যাটাগরির নাম শুনেই মনে হতে পারে এটা ইথার ভাইয়ের মত প্লেন বা পাখ পাখালির ছবি তোলা। জী না জনাব/ জনাবা। এরিয়াল ফটোগ্রাফি হল সোজা কথায় আকাশ থেকে ছবি তোলা। প্যাচায় বললে এই ধরনের ছবি তূলতে হয় সাধারন লেভেলের থেকে উচা জায়গা থেকে যেখানে ক্যামেরা মাটির সংযোগে থাকবে না। এতে ডিফারেন্ট পারস্পেক্টিভ আসে। এবং ভিউ অফ এরিয়া অনেক বেশি কভার হয়।

ছবি ১:  ব্লাক বার্ডস আই

২। Astro Photography‎ : সূর্য চাঁদ তারার ছবি। এটা তোলার একটি কায়দার নাম “স্টার ট্রেইল”। কস্টসাধ্য কাজ। এই ক্যাটাগরিতে কম্পোজিশন করাটা বেশ কষ্টকর এবং তোলাটাও অধ্যাবশায়ের কাজ। এই ধরনের ছবিতে এডিটিং ছবি আত্ত গুলো পচা মনে করলে খবরই আছে। এমনকি ক্যামেরা মেকার রা এই ছবি তোলার জন্য স্পেশাল ক্যামেরা তৈরী করে। যেমন ক্যানন ৬০ডি এ (Canon 60Da) :p এধরনের ছবি তোলার জন্য অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবস্থান ও সুইটেবল জায়গা বের করা জরুরী।

Photo -দোলন

ছবি ২- দোলন

 

৩। Aviation Photography : এইটা আমাদের সকলের পরিচিত ইথার ভাইয়ের প্রিয় ক্যাটাগরি। যা ভাবছেন তাই এইটা প্লেনের ছবি তোলা। প্লেন না বলে উড়নযান বলা ভালো কারন ইউএফও এর ছবিও এই ক্যাটাগরিতে পরে। মোদ্দা কথা সকল প্রকার Aircraft এর ছবি তোলা ও তার কম্পোজিশন করা। এক্ষেত্রে উড়নযান সম্পর্কে আইডিয়া থাকাটা ভালো। তাইলে আপনি #avgeeks হতে পারবেন ।

ছবি ৩: ব্লাক বার্ডস আই

৪। Photojournalism : এইটার মুলত কোন ঘটনা ধারন করার জন্য যে ছবি তোলা হয় তাকে রিপ্রেজেন্ট করে। এই ধরনের ছবিতে কম্পোজিশনের চেয়ে ধারনকৃত ঘটনাটা ফুটে উঠতেছে কিনা তা বেশি জরুরি। স্ট্রিট ফটোগ্রাফির সাথে এখানেই এর বড় পার্থক্য। স্ট্রিটে আপনি যা দেখছেন বা ভালো লাগছে তাই অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন কিন্তু ফটোজারনালিজমে আপনাকে ছবির ঘটনা বা কনটেক্সট বুঝা যাচ্ছে কিনা খেয়াল রাখতে হবে।

ছবি ৪: কাসি

৫। Architectural Photography : শুরুতে উদাহারনে যা বলেছিলাম। আখাম্বা বাড়ি তথা সকল স্ট্রাকচারের ছবি। এতে আপনার সোজা ও খারা লাইনের উপর নজর রাখা জরুরি। ছবিটার প্রাস্পেক্টিভ এখানে বিশেষ গুরুতর ভুমিকা পালন করে।

ছবি ৫ : দোলন

৬। High Key : এককথায় ছায়াহীন ছবি। এতে লাইটের আধিক্য বেশি থাকে। কোন ছবির চোখে আটকানো ছায়াগুলো অধিক লাইট দিয়ে মুছে ফেলাকে হাই কি বলে। তয় ওভারএক্সপজড ছবিরে হাইকি বলিয়া চালাইলে হইবে না :p ছায়া মুছার জন্য এক্সট্রা লাইট এবং সাবজেক্টরে এক্সপোজড করার জন্য চারিদিক থেকে আলো ফেলতে হয়।

ছবি ৬ : কুতুবউদ্দীন

৭। Low key : সম্পূর্ণভাবে হাইকির বিপরীত। হাইকি আলোর খেলা হলে লো-কী হল ছায়ার খেলা। এখানে অন্ধকার প্রাধান্য পায়। আপ্নের সাবজেক্টের যেটুকু আপনি দেখাতে চান তা বাদে আর কিছুই দেখা যাবে না। এইধরনের ছবি তোলা ও সুন্দর কম্পোজিশন করা বাঘা ফটোগ্রাফারদের জন্যও কঠিন আরকি :D।

ছবি ৭: ফায়েক তাসনিম খান

৮। Silhouette : আলোর অবস্থান হবে সাবজেক্টের পিছনে। এতে সাবজেক্ট সম্পূর্ণ অন্ধকার ভাবে দেখা যাবে। তার আকার বুঝা যাবে কিন্ত অন্য কিছু দেখা বা বুঝা যাবে না। এক্ষেত্রে বাকগ্রাউন্ড ইন্টারেস্টিং বা কালারফুল হলে ভালো হয়। এই ধরনের ছবি মুড প্রকাশে বেশি ব্যাবহার হয় 😀

ছবি ৮: রাকিব রেজা

যাক আজ এইখানেই শেষ করি। আরও অনেক আনকমন ক্যাটাগরি আছে। এই লেখাটার মূল উদ্দেশ্য হল আপনাকে সম্ভাবনার কথা জানানো। আপনি হয়ত নিজের পছন্দের কিছু ক্যাটাগরির ছবি তুলে অভ্যস্ত বা সাছন্দ্য বোধ করেন। এই ক্যাটাগরিগুল আপনি ট্রাই করে নতুন পছন্দ পেতে পারেন। কোন ধরনের ছবি কিভাবে তুলবেন তার বিস্তারিত দেয়া হোল না কিন্তু আপনি চাইলেই সহজেই তা বের করে নিতে পারেন অন্তরজাল বা ইন্টারনেটে খোঁজ ডা সার্চ করে। অথবা এই ক্যাটাগরির ফটোগ্রাফারদের সাথে যোগাযোগ করে। এতে আপনার ছবির মূল বিষয়ের ভ্যারাইটি বাড়বে এবং ছবি তোলার পর আরও আনন্দ পাবেন।

5 thoughts on “আমাদের ছবির ক্যাটাগরি ক্যাচাল ও ছবির বিষয়ভিত্তিক কম্পোজিশন – ১ম পর্ব – ফায়েক তাসনিম খান

  1. damien_thorne

    উফ, আবার আমার সেই কাল্লু মার্কা ছবি? লেখা টা ভাল হইসে। স্ট্রীট আর লাইফস্টাইল ক্যাটেগরী নিয়ে লেখা থাকলে আমার কাছে ব্যাপার টা আরেকটু ক্লিয়ার হত।

    1. Iftekhar Ahmed Eather

      ভালো লাগছে তবে তামিম ভাইয়ের সাথে একমত, আমি স্ট্রীট, লাইফ স্টাইল আর আলোচিত ফাইন আর্ট ফটোগ্রাফি নিয়ে কিছু বললে আরো কিছু জানতে পারতাম

Leave a Reply