আপনি একটা কমলা লেবুর ছবি তোলার চেষ্টা করছেন কিন্ত ছবি তোলা পর দেখা সবুজ লেবুর মতন লাগছে। কমলা রং হারিয়ে গিয়ে সবুজ হয়ে গেছে। এটা হলো কিছু। আপনি দেখছেন কমলা রং আর ক্যামেরা দেখছে সবুজ রং। আর এজন্য আপনার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। ঠিক করলে ক্যামেরা বদলে ফেলবেন। ভাবছেন ক্যামেরা ঠিক মতন রং দিতে পারছে না। কি তুলছি কি আসছে। তাই আপনি নিরীহ ক্যামেরার ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছেন। হয়ত আপনি বুঝতে পারছেন না যে, দোষটা আসলে ক্যামেরার নয়। ফটোগ্রাফিতে White Balance এর ভূমিকা অনেক ক্যামেরা ব্যবহারকারীরা বুঝতে পারেন না। কিন্তু যখন আপনি ছবি তুলতে যাবেন তখন আপনার কাঙ্খিত রং পেতে White Balance মূখ্য ভূমিকা রাখবে। মজার ব্যাপার জানেন, সৃষ্টিকর্তা আমাদের চোখে পাওয়ারফুল White Balance সিস্টেম রেখে দিয়েছেন এই জন্যে আমরা প্রতিটি রং সুস্পষ্টভাবে দেখতে পাই। যাদের রং বুঝতে সমস্যা হয় তাদেরকে বলে কালার ব্লাইন্ড কিংবা স্পেসিফিক রং ডিটেক্ট করতে পারে না। যেমন: ট্রাফিক সিগন্যালের যখন বাতি জ্বলে প্রথমে লাল বাতি তারপর হলুদ বাতি তারপর সবুজ বাতি জ্বললে গাড়ীগুলো চলাফেরা করে। এর রংগুলো কালার ব্লাইন্ডদের বুঝতে কষ্ট হয়। তেমনি একটা ক্যামেরা সহজে তার যান্ত্রিক চোখ দিয়ে সঠিক রং খুঁজে পায় না তখন White Balance এর সাহায্য নিতে হয়।
White Balance আসলে কি? এটি একটি ছবির তোলার সময় বিভিন্ন আলোক উৎস থেকে নিঃসৃত অবাঞ্ছিত রং যেমন অতিরিক্ত নীল, অতিরিক্ত কমলা, অতিরিক্ত সবুজ ইত্যাদি সংশোধন করার পদ্ধতিকে বুঝায়। আমরা কেন এটি ব্যবহার করবো? আমাদের চোখ যত দ্রুত একটা নির্দিষ্ট পরিমান আলোতে যে কোন দৃশ্যমান বিষয়কে যে রংয়ে ও বর্ণে দেখে সেটি কিন্তু আমাদের ক্যামেরার যান্ত্রিক চোখ আমাদের চোখের মতন একদম সঠিক পারে না। তাই এই White Balance ছবির সঠিক রং পেতে সাহায্য করে। যেমন: নিচের ছবিটি দেখুন প্রথম ছবিতে অতিরিক্ত নীল আলো চলে এসেছে।
উপরের অতিরঞ্জিত ছবি নিচে সংশোধন করা হয়েছে “ডে লাইট White Balance” দিয়ে, নিচের ছবিটি দেখুন:
আমরা যখন ছবি তুলি তখন বিভিন্ন আলোক উৎস ব্যবহার করি যেমন: সূর্যের আলো, ফ্লাশ, টাঙ্গটেন, টিউব লাইট, মোমবাতি ইত্যাদি । একাধিক আলোক উৎস থেকে একাধিক রকমের রং বের হতে থাকে যা কখনো বেশী লাল কখনো কম লাল কখনো বেশী নীল কখনো কম নীল। এগুলোকে বলে কালার টেম্পারেটার যার বাংলা হচ্ছে রং তাপমাত্রা। এই রং তাপমাত্রার একক হচ্ছে “কেলভিন (K)”। নিচে কোন আলোক উৎসতে কেলভিনের মান কত হলে ভালো তা বর্ণনা করা হলো।
রঙ তাপমাত্রার পরিমান | আলোক উৎস |
১০০০-২০০০ K | মোমবাতি |
২৫০০-৩৫০০ K | টাঙ্গস্টেন বাল্ব (সাধারন বাল্ব) |
৩০০০-৪০০০ K | সূর্যোদয়/সূর্যাস্ত (পরিস্কার আকাশ) |
৪০০০-৫০০০ K | ফ্লুরোসেন্ট ল্যাম্প (টিউব লাইট) |
৫০০০-৫৫০০ K | ইলেকট্রনিক ফ্লাশ |
৫০০০-৬৫০০ K | পরিস্কার আকাশে দিনের আলো সূর্য যখন মাথা উপরে |
৬৫০০-৮০০০ K | হালকা মেঘের আকাশ |
৯০০০-১০০০০ K | ঘন ছায়া ও মেঘলা আকাশ |
একটা ছোট জিনিষ মনে রাখতে হবে, রং তাপমাত্রার পরিমান যত কম হবে তত নীল রং এর দিকে ধাবিত হবে তেমনি রং তাপমাত্রা যত বেশী হবে লাল/হলুদ রং বাড়তে থাকবে।
অটো ওয়াইট ব্যালেনস | ||
কাস্টমস | ||
কেলভিন | ||
কালার তাপমাত্রা বাড়ায় | টাঙ্গস্টেন | |
ফ্লুরোসেন্ট | ||
দিনের আলো | ||
ফ্লাশ | ||
মেঘলা আকাশ | ||
ছায়া বা শেড |
বিভিন্ন ক্যামেরার মডেল অনুসারে এরকম White Balance সেট মোড থাকে। যারা White Balance প্রিসেট করতে চান না কিংবা ঝামেলায় যেতে চান না তাদের জন্যে অটো White Balance ভালো । কাস্টমস এর ক্ষেত্রে যে কোন গ্রে রংয়ের/ঈষৎ সাদা রংয়ের উপর ফোকাস করে White Balance ঠিক করতে পারেন এই ক্ষেত্রে যেখানে আলোর উৎস একই রকম এবং রং তাপমাত্রা অপরিবর্তনশীল সেখানে White Balance কাষ্টমাইজ করে নিতে পারেন। অটো White Balance মোডে ৩০০০ K /৪০০০ K থেকে ৭০০০ K পর্যন্ত রং তাপমাত্রা সেট করে থাকে।
বাকি ছয় ধরনের White Balance মোডে বিভিন্ন আলোক উৎস অনুযায়ী কালার কাস্ট করে থাকে যেমন: আলোক উৎস যদি সরাসরি সূর্যের আলো হয় সেইক্ষেত্রে White Balance দিনের আলো মোড দিলে স্বাভাবিক রং পাওয়া যাবে। টাঙ্গসেন্ট মোড দিলে একটু ব্লু রং বাড়বে, শেড বা ছায়ার মোড দিলে লালচ রং বাড়বে। আলোক উৎস যদি টাঙ্গসেন্ট বাল্ব হয় সেইক্ষেত্রে White Balance টাঙ্গসেন্ট মোড দিলে স্বাভাবিক রং থাকবে তবে একটু হলদে ভাব থাকবে, দিনের আলো মোড দিলে নীল হবে , শেড বা ছায়ার মোড দিলে নীল রং আরো বাড়বে। মেঘলা সময় শেড মোডে তুললে স্বাভাবিক রং পাওয়া যাবে, দিনের আলো মোডে গেলে লাল বেড়ে যাবে, টাঙ্গসেন্ট মোডে গেলে লালচে হলুদ ভাব বেশী হবে।
ইলেকট্রনিক ফ্লাশ আর দিনের আলো প্রায়ই কাছাকাছি রং তাপমাত্রা দিয়ে থাকে। ফ্লাশের রং তাপমাত্রা কোন সময় দিনের আলো থেকে অতিরিক্ত হতে পারে সেটি ফ্লাশ মডেল ও কার্যক্ষমতা অনুসারে নির্ভর করে।
ছবি তোলার পরে ফটোশপ ও লাইটরুম দিয়ে White Balance সংশোধন করা যায়। এইক্ষেত্রে “র” ফরম্যাটে ছবি তুললে সঠিক রং পেতে পারেন। জেপেইজে মোডে ছবিতে ক্যামেরা অনেক সময় রং নির্বাচনে ভুল করে থাকে। তখন ফটোশপে বা কোন ফটো এডিট টুল দিয়ে শতভাগ ঠিক করা সম্ভব হয় না।
আশা করছি আপনাদের White Balance এর বিষয়টি সহজ হয়ে গিয়েছে। কেমন লাগল জানাবেন। কোথাও কোন সংশোধন থাকলে জানাতে ভুলবেন না।
লেখাটা অসাধারণ হয়েছে। বিষেশ করে হোয়াইট ব্যালান্সের চার্টটা দেবার জন্য অনেকেরই সহজে বুঝতে সুবিধা হবে।
শেয়ার করছি।
সুন্দর লেখা (Y)
oshadharon hoyeche Ayon vai.
valo lagce bhaiya….. 🙂
oshadharon..jodio ami ei bepare lekhoker prottokko help e peyechi kisudin age tar age amr dharona khub km e co ei bepare chobi te ki ki change ase sheta nea
চমৎকার ……….
Thank you via for such information
চমৎকার হয়েছে সবাই উপকৃত হবে
উপকারী 🙂
onek kaje dibe… thanks for sharing vaiaa
Thanks Apu.
আমাদের ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা ও কিন্তু কালার ব্লাইন্ড 😛 দারুন লেখা ..
দরকারি উপকারি 🙂