প্রথমে জানিয়ে রাখি এই গল্পটা আমি লিখি নাই। ম্যাক্রু যাদুকর কুতুব উদ্দীন ম্যাক্রো লেন্স নিয়ে এই গল্পটি লিখেছে। গ্রাসহপার্স এর অনেক মেম্বার অনুরোধ করেছিলেন, ম্যাক্রো লেন্স নিয়ে কিছু একটা লিখতে। আমি ম্যাক্রো লেন্স সম্পর্কে অজ্ঞ তাই আমি কুতুব উদ্দীনের সহযোগিতা চেয়েছিলাম। উনি আমাকে নিরাশ করেন নি। দারুন গল্প লেখে পাঠিয়ে দিয়েছেন। আমি উনাকে গল্পটা গুছিয়ে দিয়েছি তারপর উনার অনুমতি নিয়ে আমি গল্পটি নিজে আপলোড করলাম। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
————————————————————————————————-
আজকের লেন্সগল্প (৬) : পোকাপুকি ওরফে ম্যাক্রু লেন্স – কুতুব উদ্দীন
একদিন অনলাইনে বসে বসে ছবি দেখতেছিলাম, একটা মাছির চোখ দেখে মুখ হা হয়ে গেলো, মাথা আউলাইয়া গেলো, ভাবতে লাগলাম হালায় এইডা তুলল ক্যামনে ! না, আমাকেও ম্যাক্রো করতে হবে। পুকাপোকিগ্রাফি করতে হবে।
১৮-৫৫ মি.মি কিট লেন্স হাতে নিয়া মাছি খুজতে লাগলাম্। রান্না ঘরে বউয়ে রান্দে, আমি এই ঘরে ওই ঘরে গিয়ে মাছি খুঁজি। আমার বউ আমার উল্টা পাল্টা কাজকারবারের ব্যাপারটা খেয়াল করলো। আমার বউ আমারে ঝারি দিয়া কইলো, “এদিক ওদিক এখানে ওখানে কি করো। এক জায়গাতে স্থির হয়ে বসে থাকো”। আমি মুচকি হাসি দিয়ে কহিলাম,“জ্বি মানে, একটা বদ মাছি ঢুকছে, ওইটারে একটু সাইজ দিতে ঢুকছি”।
একটা মাছি পেয়েও কিট লেন্স দিয়ে মাছির চোখতো দূরে থাক, মাছিটারেও কাছে টেনে আনতে পারলাম না। মেজাজটা খুব খারাপ হলো। এতো দাম দিয়ে ক্যামেরা কিনলাম হালার বলদা মাছিটারেও টাইনা কাছে আনতে পারলাম না। আমি হালার একটা বলদ। এই দুঃখ কই রাখি । মন খারাপ হলো অনেক।
পড়ার ঘরে এসে অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করলাম। বুঝতে পারলাম বেকুবতো আমার ক্যামেরা না, বেকুবতো হালার আমি। কিট লেন্স দিয়ে কি ম্যাক্রু হয়।
যাউকগা, ট্যাকটুকা নাই ম্যাক্রু লেন্স কিননের, তাই কিট লেন্সটারে দিয়া ম্যাক্রু তুলুম তাই ম্যাক্রু ফিল্টার কিনলাম।
ম্যাক্রু ফিল্টার দিয়া আরেকটা মাছিরে কাছে পেয়ে গেলাম। লগে লগে কিলিক। খুশীতে ডিসপ্লে দেইখ্যা চান্দি হট। সব কালাকুলা ছবি মাথামুথা কোনদি যে কি, বুঝনের নো ওয়ে। লাইটিং সেটআপ ভ্যাজাল হইতাছে।। লাইটতো পর্যাপ্ত পাচ্ছিলাম না। আবার অনলাইনে ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম এবং বুঝলাম আমাকে আবার ফকির হতে হবে মানে ম্যাক্রু ফ্ল্যাশও একটা কিনতে হবে। যাই হোক কিনলাম। আবার ছবি তুললাম, মাগার আবার নতুন সমস্যা কিমুন জানি ঘুলাঘুলা, নো ইস্পষ্ট, মাথা ঘুরাইলে যেমন দুনিয়াডা ঘুলা লাগে, হেরাম লাগে। পর্যাপ্ত শার্পনেস পাচ্ছিলাম না,
হঠাৎ দেখি ম্যাক্রুর প্রেমে পইড়া গেছি। ওরে প্রেম হালার মাথা নষ্ট কইরা
ঠিক করলাম ম্যাক্রু লেন্স কিনবো। টাকা জমানো শুরু করলাম।
একদিন ম্যাক্রু লেন্স কিনে নিলাম ১০০ এম এম এর এবং ঝাঁপাই পড়লাম ম্যাক্রুগ্রাফিতে। পোকাপুকা, ব্যাঙাবুঙা যাই পাইছি কোপাইয়া লাইছি।
যাই হোক আসল কথায় আসি, মেলা গল্প হইছে, দুষ্টুমী হইছে, এবার একটু সিরিয়াস টেকনিকাল আলাপ ছাড়ি, ম্যাক্রো লেন্স হলো, সেই লেন্স যেটা আপনি ব্যবহার করে একটা সাবজেক্টকে আপনার চোখের ঠিক সামনে এনে আপনি যতো বড় দেখবেন ততো বড় বা তার চেয়ে বড় এই লেন্স দেখাবে।
ম্যাক্রো ১:১ মেগ্নিফিকেশন থেকে শুরু হয়। এখন কথা হচ্ছে ১:১ মেগ্নিফিকেশন্টা কি ? ১:১ হচ্ছে লাইফ সাইজ। এখানে প্রথম ১ হচ্ছে, আপনার ক্যামেরার প্রজেক্টরে সাবজেক্ট এর সাইজ এবং অন্যটি হচ্ছে রিয়েল লাইফে সাবজেক্টের সাইজ। মনে করেন, একটা মাছি যদি ১ সেন্টিমিটার লম্বা হয় এবং আপনার লেন্স যদি সেটাকে সেন্সরে ১ সেন্টিমিটার প্রোজেক্ট করে তাহলে সেটি ১:১ মেগ্নিফিকেশন। আর যদি সেন্সরে সেটি .৫ প্রজেক্ট করে তাহলে বুঝতে হবে আপনার সাবজেক্ট প্রজেক্টার থেকে .৫ টাইমস বড়। তারমানে সেটিকে ১:১.৫ মেগ্নিফিকেশন বলে কিন্তু ১:১.৫ ম্যাক্রো নয়। এখন মনে করেন, মাছিটিকে আপনার ক্যামেরার প্রজেক্টরে ৫ সেন্টিমিটার দেখাচ্ছে তার মানে রিয়েল লাইফে মাছিটি ৫ টাইমস ছোট। আর সেটিকে ৫:১ মেগ্নিফিকেশন বলে্। সাধারন ম্যাক্রো লেন্সগুলা ১:১ থাকে। শুধু ক্যানন এর ৬৫ এম এম লেন্সটি ৫:১ মেগ্নিফিকেশন হয়। ১:১ মেগ্নিফিকেশন থেকে আপনাকে আরও বড় পেতে হলে আপনাকে ম্যাক্রো ফিল্টার বা এক্সটেনশন টিউব ব্যাবহার করতে হবে। আপনার ম্যাক্রো লেন্স এর সাথে ট্যামরন ৭০ এম এম – ৩০০ এম এম লেন্সকে ম্যাক্রো ম্যাক্রো লেন্স বলে চালাচ্ছে আসলে এটি ম্যাক্রো লেন্স না। কারন এটি ১:২ মেগ্নিফিকেশন যার মানে এটি সাবজেক্টকে নর্মাল থেকে ২ টাইমস ছোট দেখায়।
হে:হে: আজকেই নেমে পড়ুন ম্যাক্রুগ্রাফি ওরফে পোকাপুকিগ্রাফি । আপনার ম্যাক্রুগ্রাফির প্রতি শুভ কামনা।
(কুতুব উদ্দীন)